সম্পাদকীয়--
স্বরধ্বনির এটি দ্বিতীয় সংখ্যা। প্রথম সংখ্যার সীমিত প্রচার ও প্রসার আমাদের খানিক নিরুৎসাহ করলেও শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় সংখ্যার জন্যে আমরা প্রস্তুত হতে পেরেছি। নামীদামী লেখকদের কাছ থেকে লেখা পাবার আশা করিনি। তবে এটা লক্ষ্য করা গেছে যে নবীন কবিদের কলম থেকেও কখনও কখনও উঠে আসছে চমৎকারী কিছু লেখা। তাকে সম্বল করে আর তথাকথিত কিছু ভাল লেখা নিয়ে প্রস্তুত করার চেষ্টা করা হল এবারের সংখ্যা।
পত্রিকা প্রকাশের গোড়ার দিকের ইতিহাস বোধহয় এমনটাই হবার কথা। কারিগরী দক্ষতার অভাবে আমাদের প্রথম সংখ্যাটি পাঠক সমক্ষে ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। এবার তাই সহ-সম্পাদক হিসাবে কলকাতা থেকে যুক্ত হয়েছেন লেখক, সমিত কর্মকার। তাঁর হাতে এসে এবারের সংখ্যাটি প্রাণ পাবে বলে আমার বিশ্বাস। কিছু উন্নাসিক লেখক কবিরা আছেন যাঁরা মোটামুটি লেখেন ভালো, কিন্তু লেখার মানের মাপদন্ড থেকে তাঁদের ব্যাবহারিক মাপদণ্ডের ভার আরও অনেকটা বেশী বলে মনে হয়েছে। তবে এটা তো আমরা সবাই জানি যে চেষ্টা মানুষকে অগ্রগতির দিকে ঠেলে দেয়। এই পুনঃপৌনিক চেষ্টাকে সম্বল করে আমরা আগামীতে ক্রমশ সৃজনতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবো এ আশা নিয়েই আজের সম্পাদকীয় কথার ইতি টানছি--ধন্যবাদান্তে--
পুনঃ--অনিবার্য কারণ বশত এবারও নিতান্ত সাদামাটা ভাবেই এ সংখ্যা প্রকাশিত হল। বিনীত--
তাপসকিরণ রায়, সম্পাদক
শমিত কর্মকার, সহ-সম্পাদক।
সূচিপত্র--সীমা ব্যানার্জী রায়, জয়া বসাক, শুভ্রা ভক্ত, কাবেরী তালুকদার, দিলীপ সরকার, সান্ত্বনা চ্যাটারজী, মাথুর দাস, পৃথা বিশ্বাস, সুচন্দ্রা বসু, রূপা বাড়ৈ, উশ্রী মন্ডল, সুনিতা ঘোষ, সন্ধ্যা রায়, শমিত কর্মকার ও তাপসকিরণ রায়।
হরিণীর মায়া
সীমা ব্যানার্জী রায়
হে আকাশ !
কী রঙে রাঙালে এত স্বতন্দ্র আঁধার
তৃষ্ণায় আতুর মন শুনেছো কখনো?
:বাহাদুর তুমি !
এঁকেছো মায়া হরিণীর মায়া
আমার কল্পনা তাই,
জিগজ্যাগ কৌশলে এক পশ্চিমা-প্রতিচ্ছায়া
:নিজেকে খুঁজি আর খুঁজি
চূড়ায়-চূড়ায়, বিস্ময়ের মাঝে তোমার আদর স্পর্শে
আমার স্বপ্ন খোঁজে প্যাস্টেল রঙের সেই চেতনাসিন্ধু
:আগ্রহে প্রত্যক্ষ করি জলস্থল অন্তরিক্ষ
এলোমেলো গাছের মাথা, বিদ্যুতের দৌড়
এর-ই নাম কী? কথা
এ যেন মন্দ ভালোয় এক বৃক্ষ
জয়া বসাকের কবিতা—
সেই মেয়েটি, যে মেয়েটি ছিল
সেই যে মেয়েটি বিকেলের পরন্ত রোদে কলসি কাঁধে বাড়ি ফেরে,
সেও জানে না তার অধিকার, তার বাঁচার উপায় ।
যে মাঠের কাজে মেহনতি পরিশ্রমে পর ঘরে ফিরে মাতাল স্বামীর অত্যাচারের আদর পায়,
কোন সুখের আভাসে গা ভাসিয়ে এই জীবন মরু করে তোলে ?
যে মেয়েটি কালো কুৎসিত দেখতে - -
সেও জানে না জীবনের রঙের ছোঁয়া ,
সেও জানে না সুখী নিজেকে নিজে ভাবা ।
যে মেয়ে টি দিনের পর দিন অশ্লীলতার শিকার হয়েছে,
সেও জানে না, আর বুঝতেও পারে না ...
এই পাশবিক মনুষ্য সমাজের নিয়ম ধারা ।
তখনও তুমি বা তোমরা দোষ ধরো মেয়েদের ।
কোন সুখের জন্য এমন ভেদাভেদ, পৈশাচিক বর্বরতা চালিয়ে যাও ?
কেনো ??? কি শান্তি তাতে?.....
তবুও তোমরা জেনে রেখো হারি নি, আর হারবোও না,
যেকোনো ভাবেই নয়......সেই মেয়েটি, যে মেয়েটি ছিল ।
হঠাৎ...,প্রিয় তুমি
কোনো হিসেব নেই,
কোনো অঙ্ক নেই,
কোনো জটিলতাও নেই ,
হঠাৎ, কেমন করে যেন চলে এলে আমার এ শহরে ।
হঠাৎ, পল্লী গ্রামের পায়ের ছাপ, আলতায় রাঙিয়ে দিলে এই তৃষ্ণার্ত জীবনে ।
হঠাৎ, ঘুম কেড়ে মস্তিষ্ক-হৃদয়ের শিরা উপশিরা জালিকা এক নিমেষে -
লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে গেলে ।
আমার কবিতারাও এতোটা স্পর্ধা দেখায়নি, জানতো !
আমার গল্পেরাও আমার থেকে আমাকে কাড়েনি, কখনোও - -
আমার শব্দেরাও এতোটা মায়াবী হয়নি, কোনো দিনও ।
রাতের বুকে বসে বসে তোমার নামের জপমালা বুনেছি।
সাগরের মত অন্তহীন, তোমার নামের ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েছি, নিজেকে ।
দিনের আলোর মাঝেও সূর্যরশ্মির মতোও শরীর ছুঁয়ে দিয়েছো, খুব গোপনে, অনুভবে ।
সব শব্দের মাঝেও প্রতিটি বর্ণ তুমি, অক্ষর তুমি।
প্রতিটি ভাষা তুমি ।
সব বেদনার মাঝেও অশ্রু তুমি,
সব হাসির মাঝেও সুন্দর তুমি ।
পুরনো গানের নতুন সুরে,
কথাদের মাঝে ক্লান্তি বিচ্ছেদ ঘটিয়ে,
স্নিগ্ধতার পরশ ঢেলে - -
এভাবেই হঠাৎ,....প্রিয় তুমি এলে অনুভবে--অনুভূতিতে ।।
বন্ধু আমার হবি ?
শুভ্রা ভক্ত
এই ছেলে তুই ,বন্ধু আমার হ'বি?
একটুখানি অন্যরকম--
মানুষ হওয়ার নেই কো কোনো ঝক্কি।
নেই সময়ের বাঁধা ধরা গান
নেই নিয়মের ভাসিয়ে দেওয়া বান
শুধু সাত রঙ আর তুলি দিয়ে
নিজের মতো, জীবন-ছবি আঁকবি!
লেখার খাতা গুছিয়ে দেবো,
সবুজ পাতা ঠিক চেনাবো।
মন খারাপের দিনগুলোতে,
এক আকাশের নীচে বসে,
শুনবো আমি চুপটি করে,
তোর মন খারাপের কাব্য।
এই ছেলে তুই, বন্ধু আমার হবি?
একটু খানি অন্যরকম--
মানুষ হওয়ার ভার নেই এক রত্তি।
সবাই তারা মানুষ হোক,
জাগুক মনে জীবন বোধ।
রঙিন আলোয় জীবন ভাসাক
স্বপ্ন তাদের হোক সব সত্যি।
তোর ঝুলিতে নীল আকাশ
পায়ের তলায় নরম ঘাস--
সন্ধ্যেবেলার আকাশ ফানুস
আবার আমরা জ্বালবো।
হারিয়ে যাওয়া ছোট্টো নদীর
পথ আবার ও খুঁজবো।
এই ছেলে তুই বন্ধু আমার হবি?
কাবেরী তালুকদারের কবিতা--
বনলতা সেন
পৃথিবী পরিক্রমা কর ছিল এক নারী।
সেই কোন্ শৈশব থেকে তার ডাগর দুটি চোখ ছিল অতল স্পর্শ দীঘী । ডুবে মরতে চেয়েছিল কত যে পুরুষ জীবনের প্রত্যুষে সে শুরু করে ছিল তার পরিক্রমন। এখন জীবন তার থেমেছে সায়াহ্নে। শত ছিন্ন হয়েছে তার বহু মূল্য শাড়ি। তাই দিয়েই সে অঙ্গ ঢাকে। রাজ প্রাসাদের সে নারী, আশ্রয় চেয়েছিল পৃথিবীর ভালো মানুষদের কাছে। মেলেনি আশ্রয়, শুধু শরীরের আশ্রয় দিতে চায়। একদিন মধ্য গগনে সূর্য হয়ে জ্বলে ছিল সে। মিলে ছিল কত শত পুরস্কার। ফিরেও চায়নি সে। ভেবে ছিল বুঝি এই মধ্যগগনের সূর্য হয়েই রয়ে যাবে আজীবন। সূর্য গেল অস্তাচলে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, রাত্রি প্রায়, খসে পরলো সব আভরণ। নেবে এলো রাজ পথে । দিশাহারা অর্দ্ধ উন্মাদ সে নারী আর পথ চলতে পারে না । বহু চেষ্টায়, অনেক কষ্টে সে এসে দাঁড়ায়, টালিগঞ্জের উত্তম স্টাচুর সামনে। হাত দিয়ে রোদ আড়াল করে, সে তাকায় উত্তম কুমারের স্ট্যাচুর দিকে। ঠিক মনে পড়ে না তার এ জন্মে, না গত জন্মে, কবে যেন সে ছিল বনলতা সেন।।
(সাবিত্রী চ্যাটারজ্জী স্মরনে লেখা)
জেহাদ
সেবার এক ভীষণ কান্ড হলো,
রাজপথ জুড়ে চলেছে মানুষ, হোক কলরব রোলে।
সবার সামনে চলেছেন দুই ধুতি পাঞ্জাবী
আর চোখেতে চশমা এটে একজন অতি বাম নীতি
সরকার আর একজন বাঙলার রুপ খুলেছেন গ্রাম গঞ্জ ঘাটে।
এরপর চলেন মিলীটারী বেশ কুচ কাওয়াজের ভঙ্গি,
পাশেতে আছেন সুটেড বুটেড টাক মাথা এক সঙ্গী।
ওরা বোধহয় ফিদেল কাস্ত্রো আর আর আমাদের নেতাজি।
কোথায় চলেছেন, কি ওনাদের জেহাদী।
এরপর চলেন দলে দলে সব বুদ্ধিজীবীর দল
শম্ভু, শক্তি, সুনীল, মহাশ্বেতার কলরোল।
পিছনে কে যায় লাজুক মুখের হাওয়াই চপ্পল আর লাজুক হাসি,
ওতো এচোড়ে পাকা কবি সুকান্ত, যার কবিতায় আগুন জলতো রাশি রাশি।
দ্রুত চলেছেন জাতির পিতা মালকোচা মারা ধূতি,
বাগিয়ে লাঠি, চিন্তা মগ্ন মনে ভেসে ওঠে কত স্মৃতি।
আরো কত গেল দলে দলে সব ছাত্র ছাত্রীর দল,
চিৎকার আর চেচানিতে শুধু শোনা যায়, হোক কলরব, বল।
সবশেষে এলোমেলো পায়ে, এলোমেলো চুল, দু চোখে সপ্ন মাখা।
ওতো অরুনোদয়, মেঘলা দিনে ভূবন ডাঙার মাঠে ও ঘুড়ি ওড়ায়।
ছুটে এসে জিঞাসা করি কি চাও তোমরা ?
সমস্বরে বলে ওঠে যে জীবন ছিল তব তপবনে
যে জীবন ছিল তব রাজাসনে
দীপ্ত রীক্ত সে মহা জীবন চিত্ত ভরিয়া লব,
মৃত্যু তোরন, মুক্তি হরন দাও সে জীবন নব।।
কয়েদী
জেল খানায় প্রথম যে দিন কয়েদী ঢোকে,
তার ভাবনায় আসে, এখানে এতদিন কাটাবো কি করে।
সেই মেয়েটিরও তাই মনে হয়েছিল।
সেই যে মেয়েটি, কাল বৈশাখী ঝড়ের সাথে ছুটতো,
মেঘ ডাকলে ময়ূরের মতো নাচতো,
প্রবল বৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পরতো দীঘিতে
তাকে কয়েদ করা হল।
সে ধান ক্ষেতের আলের উপর দিয়ে হেঁটে যেত,
সবাই মিলে আখক্ষেতের আখ ভেঙে খেতে খেতে
চলে যেত দীগন্তর দিকে,
পুকুরে নেবে আচল বিছিয়ে মাছ ধরতো,
তাকে কয়েদ করা হল।
প্রথমে সে কিছুই বোঝে নি।
বুঝলো, শ্বশুর বাড়িতে, প্রথম বৃষ্টি ভেজার সময়।
খুব শক্ত হাতের একটি চড়। কাদেনি সে।
শুধু মনের অব্যক্ত ব্যথা গড়িয়ে পড়ে ছিল চোখের জল হয়ে।
গালফেটে রক্ত ঝরছে।গাল থেকে হাত সরিয়ে,
চোখের সামনে মেলে ধরে রক্তাক্ত সেই হাত।
সবাইকে অবাক করে সে গান গেয়ে উঠলো,
--সে কোন বনের হরীণ ছিল আমার মনে,
কে তারে বাধলো অকারণে ?।।
সান্ত্বনা চ্যাটারজী
তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না,
তোমরা পাচ্ছনা কি টের
বাতাসীর দীর্ঘশ্বাস;
তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস
শুধুই কি ওড়াবে ছাই নিভে যাওয়া চিতার আগুনে.
তোমরা কি শোনোনি কেউ,
সমুদ্র গর্জন !
উথাল পাথাল ঢেউ
বুকের ভিতর!
কোনো দিন মরেনি কি বৃথা আক্রশে কাল গুনে গুনে !
সঞ্জীবনী সুধা, মাতাল লম্পটের হাতে
করেছ কি পাণ !
আকন্ঠ ডুবিয়ে রেখে পাঁকে
পেরেছ কি বাঁচাতে আত্মাকে !
আমি তো শুনেছি তবু জীবনের গান,
তার সরল বিশ্বাসে, তার নিষ্পাপ নিঃশ্বাসে.
তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়া প্রাণ
করেছিল দান ।
তোমরা কি জান তাকে ?
স্বরচিত একটি কবিতার বই বের হলে
মাথুর দাস
স্বরচিত বইটি বেরোলেই কবির ব্যস্ত জীবন --
সভাগৃহ সাক্ষী থাকে, বিক্রাল্পতা, গালগল্প
হৈ চৈ হুল্লোড় খানাপিনা প্রেমালাপ অল্পস্বল্প,
এভাবেই কেটে যায় কবিতার বৃথা বিজ্ঞাপন ।
কোথা কোথা উৎসব আছে, কবে, কবিতার --
হালফিল খোঁজ রাখে সবকিছু কবি তার,
পাঠক নেই, ছিলও না তেমন কোন কালেই,
বিতরণে তৃপ্ত কবি, সঙ্গ-ছবি সুখ মাখালেই ।
এখন এমনই ধারা, সারাদেশে কবি অগণন --
আবারও সে আপ্ত কথা ফিরে আসে ওই,
সেই কথা, ‘স্বরচিত একটি কবিতার বই
বের হলেই শুরু হয় কবির হকার-জীবন' ।
হাস্যময়ী লাস্যময়ী অষ্টাদশী যুবতী
পৃথা বিশ্বাস
কবিতা আমার অষ্টাদশী আলো
লিখতে লাগে ভালো
যদিও কথাগুলো হয়
নিতান্তই এলোমেলো ।
অষ্টাদশীর গলায় আজ
উচ্ছল প্রাণবন্তের চঞ্চল রেওয়াজ
কথার পিঠে কথা এলো
কথাগুলো ছিল কি অগোছালো !
ভাসিয়ে দেবো এই মন
জীবন আছে যতক্ষণ,
লক্ষ রাখি সমানে সমান
লেখায় দিয়ে যাবো,
এ জীবনের মন প্রাণ
অষ্টাদশী আজ হয়েছি প্রেমিকা
রূপ আমার অহমিকা
দূরন্তপনা চঞ্চলতা এই দিয়ে যায়।
জীবনের প্রথমভাগের মূহুর্তটা
ভর্তি করি আজ সেই কবিতার খাতা
কবিতাগুলো লিখবো বসে আজ
অষ্টাদশী হয়ে আমার জীবনের
দিন গুলোর রূপের কি কারুকাজ !
লাস্যময়ী হাস্যময়ী পেলাম উপাধি
এইটুকুর মান দিতে পারি শেষ অবধি
এই তো আমার চরম পাওয়ার ভাষা--
জীবন বাঁচার মুল মন্ত্রের আশা।
সুচন্দ্রা বসুর কবিতা--
আলোকবর্তিকা
[বিধবাবিবাহ প্রবর্তন আমার জীবনের সৎকর্ম।
আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি। নিজের বা
সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক
বোধ হইবে তাহা করিব]
ঊনবিংশ শতকের সমাজ কুসংস্কারময়
অজানা ছিল না তার জন্ম পরিচয়,
ছিলেন মাতামহ শ্মশানবাসী সর্ব সময়
বুঝেছিলেন এই শিশু সাধারণ তো নয়।
অন্তর্দৃষ্টিতে দেখেছিলেন শিশুর মুখটি তুলে-
শ্মশানের ছাইয়ের টিপ দিলেন তার কপালে।
দীর্ঘশ্বাসে মঙ্গল কামনা করি পাঠালেন তোকে
স্বয়ং ঈশ্বর ভাল রেখো বলি শ্রীহরি
বুঝে নিতে হবে তোকেই বিশ্বচরাচর।
পার হল আজ জন্মের দ্বিশতবছর
স্মরণ সভায় জাগ্রত আলোকবর্তিকা বিদ্যাসাগর।
বর্ণের মাধ্যমেই তার সাথে পরিচয়
গড়তে চেয়েছিলেন সমাজ আধুনিক শিক্ষায়
ব্রাহ্মণ্যবাদী বিধবা বিবাহের বিরোধিতায়
স্বার্থান্বেষীরা বাধা স্বরূপ এসে দাঁড়ায়।
বারবার যুক্তি বিদ্ধ হয়ে পন্ডিতেরা পরাস্ত
তাদের মতে বিধবা বিবাহ লোকাচার অসম্মত,
দৃঢ়চেতায় পরাশর সংহিতার যুক্তি প্রমাণিত
দেখালেন রেনেসাঁস যুগেও বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত।
তিনি ধর্ম সংস্কারে ছিলেন না যুক্ত
চেয়েছিলেন সমাজ হোক কুসংস্কার মুক্ত।
হোক বহুবিবাহ বাল্যবিবাহ কৌলিন্য প্রথার রোধ
জাগুক শিশু মনেই পাশ্চাত্য দর্শন বোধ।
শিশু মনের বিকাশেই হোক মনুষ্যত্ব অর্জন
বীজ হিসাবে বর্ণপরিচয় শিশুশ্রেণীতেই হয় রোপণ।
বই লিখেই করেছিলেন তার বিপণন
চাকরি ছাড়াও বই লিখেই হত অর্থ উপার্জন।
'পরার্থে প্রাজ্ঞঃ উৎসৃজেৎ' উইলেই সার্থক রূপায়ণ,
তার মধ্যেই দেখা যায় আধুনিকতার প্রতিফলন।
তিনি ছিলেন গরীবের বন্ধু আত্মজন,
আশা ভরসায় তিনিই একমাত্র বিপদভঞ্জন।
তিনি ছিলেন একাধারে বজ্রকঠোর মানবিকতায়
তাই আনন্দ পেতেন পরের সেবায়
প্রয়োজনে স্থাপন করতেন অস্থায়ী চিকিৎসালয়।
তিনিই ছিলেন অসহায়ের সহায়
ছিল না আর কেউ তার মতো দয়াময়,
ছিল যে কুসুম কোমল তার হৃদয়।
তিনি বলেন মিথ্যা সাংখ্য বেদান্ত
এর মধ্যে নেই কোন সত্য
প্রাচীন শাস্ত্র সকলই যেন অভ্রান্ত
ঈশ্বর, পরলোক, আহ্নিক অবিশ্বাস নিশ্চিন্ত।
শিক্ষক হবে ধর্মীয় সংস্কারমুক্ত হৃদয়বান
শক্তি ও দৃঢ়তায় নিজেই ইংলিশম্যান,
তাই সমাজে এনেছিলেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন
করেছিলেন ঊনবিংশ শতকে স্ত্রীশিক্ষার প্রচলন।
যে আলোকবর্তিকা জ্বেলে হয়েছিলেন মহান
একুশ শতকেও সেই আলোকবর্তিকা দেদীপ্যমান।
আজকের লক্ষ্মী
মেয়েদের বিয়ে হলে আজকের দিনে
অনেকেই বরের ঘরে এসে শোনে,
কোন ঘর থেকে লক্ষ্মী নিয়ে এলে
ঘুম থেকে সে ওঠে কি সকালে ?
স্নান সেরে যায় বুঝি রান্নায়,
তেল গড়গড়ে নাকি ঝালে পোড়ায় ?
অথবা ব্যস্ত নিজেকে দেখে আয়নায়,
খায়দায় আর শুধু কি শুধুই ঘুমায় ?
মায়ের কাছে ফোনে ফিসফিস সব সময়
বলিহারি এতো কি তাদের কথা হয় ?
রান্নায় দিতে ভুলে যায় বুঝি নুন--
নাকি কাজ কর্মে সুদক্ষ নিপুণ।
পাড়াপড়শির চোখে যেন ঘুম নেই
আর কথা নেই চাকরি করা বউ এলেই
ঘন ঘন উঁকি দেয় এসে বারান্দায়
পরপুরুষের সাথে যদি একবার দেখা যায় ?
আর শিক্ষিতা হয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে
আর কিছু নয শুধু মার জোটে কপালে।
তাই লক্ষ্মী অনায়াসে মিথ্যা বলে,
যাতে সর্বদাই ভাল বলে সকলে।
বিসর্জন
শত শত কাজ আর ক্লান্তির মাঝে
সকলের জীবনের দুঃখ কষ্ট যায় ভেসে
শিউলি শিশিরে ভেসে আসে পুজোর গন্ধ,
পুজো এলে বিষাদ সরে মন ভরে আনন্দ।
শিউলির গন্ধ ছড়িয়ে বাতাসে
রোদের ঝিলিকে শরৎ আসে,
বনরাজি হাসে হেলেদুলে কাশে
তবুও বৃষ্টির মেঘ ভাসে আকাশে।
ঢাকের কাঠি আর শঙ্খধ্বনি
জানিয়ে দেয় পুজো আসার বাণী,
তারই মাঝে কানে হঠাৎ শুনি
কবে শেষ হবে গো পুজো, ওগো দিদিমণি ?
খুলবে ইস্কুল সেই পুজো শেষ হলে
ভরাব পেট রোজ সেখানে মিড্-ডে মিলে
শুধু মুড়ি খেয়েই কাটছে পুজোর দিন
কবে ফুরিয়ে ছুটি এই আসবে দিন রঙিন।
রাস্তায় বসে যে করে সেলাই
পুজোয় খেলো সে পুলিশের ধোলাই
দিল রেখে মেশিনটা সে আদালতে
খুলবে না আদালত পুজোর দৌলতে।
ছাড়াতে হবে দিয়ে কিছু জরিমানা
মেশিন চালিয়েই যে তার দিন গোনা।
পেটের কান্না তার কে আর শুনতে পাচ্ছে
ককিয়ে বলছে কত্তা,পুজো কবে শেষ হচ্ছে?
মানবের গতিপথ
রূপা বাড়ৈ
মানবের গতিপথে ভূত-পেত্নী আছর করেছে
নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যায় রাত হলে,
ঝিঁঝি পোকার ডাকে রাক্ষস তেড়ে আসে
বাঁশঝাড়ের ধারে মানুষ খেকো রাক্ষস আছে।
ছোটবেলার গল্প কাহিনি এখন বাস্তব চিত্রে
রূপকথা আর নেই এখন অদৃশ্যতে,
মুরব্বিরা গল্প বলতো বানিয়ে বানিয়ে
এখন সব গল্প নেই ইতিহাস হয়েছে।
রূপকথার গল্প শুনে ঘুমাতো চোখ বুজে
ভোর বেলায় সকলে যেতো পাঠশালাতে,
আজ আর নেই জনপদটি সে দিনের
গড়ে উঠেছে সভ্যতা নামের প্রাসাদ যন্ত্রের।
আজ জনপদ ভীতসন্ত্র, রাক্ষসদের দখলে
মানবতা হারাচ্ছে অসহনীয় বারুদের গন্ধে,
বিজ্ঞান প্রযুক্তি ওদের পারেনি মানুষ করতে
দ্বন্দ্ব-সংঘাত হিংসা হানাহানি ওদের রক্তে।
ওদের অগ্রগতি মানবতাহীন কর্মকান্ডে
মনের বন্ধন ছিঁড়ে গেছে দুর্ভেদ্য ঘূর্ণিপাকে,
পাষাণ হৃদয় কেমন হয় সে স্বভাব দেখে
পাহাড় পর্বত ওদের কাছে হার মেনেছে।
উশ্রী মণ্ডলের কবিতা--
শাস্তি দাও
আমি যখন, অচৈতন্য অবস্থায় হসপিটালে ছিলাম
তখন এক ছেলের কণ্ঠের সাথে
একটি কচি শিশুরও আওয়াজ পেয়েছিলাম, "মা "বলে l
আমি চকিতে তাকিয়ে দেখলাম ওই ছেলের আওয়াজ আমার
সন্তানের, কিন্তু ওই কচি আধো আধো স্বরে কে ডাকলো?
আমি তখন, দিল্লীতে, আমার সন্তান ছয় বছরের, আমাকে জড়িয়ে ধরে
কাঁদতে কাঁদতে বলে,"মা সবার বুনু আছে,
আমার কেন নেই? " আমার বুনু চাই, বাস্ !
ও যখন চেয়েছে, আমাকে দিতেই হবে, এটা আমি জানি,
একটু আগে কিংবা পরে !
আমি বললাম, "বেশ, দেবো তোকে বুনু ",
স্বামীকে বললাম ছেলের ইচ্ছের কথা,
তার সম্মতিও আদায় করে নিলাম, যদিও তার অনিচ্ছাই প্রবল ছিলো,
সেই দিন, রান্নাঘরে কাজ করছি,
হটাৎ পিছন থেকে কে যেন আমাকে জড়িয়ে ধরলো,
ডাকলো, "মা !’’
আমি দেখি ফুটফুটে একটা মেয়ে, কোঁকড়ানো চুল,
বড়ো দিঘির মতো চোখ, দুস্টু মিষ্টি হাসি তার মুখে উপচে পড়ছে !
আমি বললাম, তুই কেরে, কোথায় থাকিস?
সে বললে, আমি তোমার মেয়ে, দাদাই এর বুনু,আমি তোমার জঠরে থাকি l
আমি অনুভব করতে পারলাম আমি মা হতে চলেছি,
আমার, খুশিতে পা পরে না, আনন্দের সাথে নিকট আত্মীয়দের জানালাম,
কিন্তু তারা আমার খুশিতে খুশি হল না !
বলল, গরিবের সংসার, রোজগার সামান্য,
কি সাহসে আরেকটি প্রাণ আনার কথা ভাবিস,
এই ছেলেকেই ভালো করে মানুষ কর নতুন প্রাণ আনিস না,
তাকে কি সঠিক ভাবে যত্ন করতে পারবি !
রাত্রি বেলায়, যখন ঐ ঘুমন্ত মানুষগুলোর মুখের দিকে দেখলাম,
স্বামীর পরিশ্রান্ত, কঠোর পরিশ্রমের ক্লান্ত একটা মুখ,
সন্তানের মুখের দিকে তাকালাম, ভেসে উঠলো অনাগত ভবিষৎ ,
কিছু করতে হবে, সকালের প্রতীক্ষায় জেগে রইলাম !
স্বামী কে বললাম আমার সিদ্ধান্ত, উনি বললেন তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে
তা আমারও সিদ্ধান্ত বলেই মনে করবে, সমস্ত তোমার উপরেই নির্ভর করছে l
অনেক সাহস করে বেরিয়ে পড়লাম, মেয়ে বলে, "যাসনে মা যাসনে,
আমায় তোর কাছে থাকতে দে, আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো না, মা l‘’
দুই কান চেপে ধরে, বেরিয়ে পড়লাম, পা দুটোও বিদ্রোহ করে উঠেছে,
আমি থামিনি, টলতে টলতে এগিয়ে চললাম !
ভোর বেলায়, মেয়ে আমার বলে, "আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা,
আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে, আমাকে বাঁচা মা, আমি কি মরতে চলেছি "!
আমি, চমকে উঠে বসলাম, দেখলাম আমি রক্তে স্নাত,
ঐ রক্ত যেন আমায় বলছে , আমায় মেরে ফেললি মা,
এই মুহূর্তে আমি আমার সন্তানের হত্যাকারি পরিগণিত হয়ে পড়লাম !
আজও আমি খুঁজে চলেছি, ঐ শিশুকে, যে আমাকে মা বলে ডেকে উঠেছিল,
কে সেই শিশু? সেকি আজও আমার আত্মার মধ্যে লীন হয়ে আছে !
হে ঈশ্বর এবং আমার অজন্মা কন্যা !
আমি আমার পাপের জন্য তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না,
শুধু চাইবো একজন হত্যাকারীর শাস্তি !
আমি আজও তোমাদের শাস্তির আশায় বসে আছি, শাস্তি দাও !!
জীবন
এক ফোঁটা, এক ফোঁটা করে শিশির পড়তে লাগলো
আর সামনের গর্তটা ভরে যেতে লাগলো!
হঠাৎ, দেখি পিল পিল করে অজস্র পিঁপড়ে
সাদা ডিম নিয়ে বেরিয়ে আসছে! তারা যেন, পরস্পরের মুখে মুখ লাগিয়ে বলছে
তাড়াতাড়ি চল, আমাদের বংশধরদের বাঁচাতে হবে,
আর সঞ্চিত খাদ্য ভবিষতের জন্য রক্ষা করতে হবে!
অনেক কিছু, তারা বাঁচিয়ে আনতে পারে,
আবার অনেক কিছুই ওই গর্তে ভেসে নষ্ট হয়ে যায় !
প্রতিদিন, এমন করে বাঁচে যেনো আজকে ওদের শেষ দিন !
দুটো পন্থা আছে, একটা হচ্ছে সঠিক লক্ষ্য খুঁজে নাও
আর আরেকটা হচ্ছে সেই কাজের লক্ষ্যে ভিড়ে যাওয়া !
এই, পিঁপড়েগুলো যেনো, এই নীতিই অনুসরণ করে চলেছে !
সংগ্রামই জীবন, সংগ্রামহীনতা মৃত্যুর সমান !!
আমি ও ভাসিয়েছিলাম নৌকা
সুনিতা ঘোষ
আমিও ভাসিয়েছিলাম নৌকা নববর্ষার জলে..
গা ভাসিয়েছিলাম যে চোরাস্রোতের আহ্বানে
ইচ্ছে ছিল গভীর সমুদ্রে কুড়িয়ে নেব কিছু ঝিনুক, প্রবাল, মুক্তা
ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত সে আজ পথ বদলেছে..
জানি এখন ফিরতে হবে তপ্ত বালুচরে
তবুও গায়ে মেখেছি ঝিনুক, প্রবাল, মুক্তা টুকরো টুকরো...
সন্ধ্যা রায়ের কবিতা--
আগমনী
তুমি আগমনীর ছন্দে নেমে আস,
শরতের শুভ্রাকাশের পথে নেমে আ্স,
শিশিরের শিউলি বিছান পথে নেমে আস,
নবরূপে নবরঙে নবসাজে তুমি নেমে আস,
নবরূপে নবরঙে নবসাজে তুমি আ্স,
প্রলয় পাবনে পুণ্য লগনে তুমি আস !
তুমি কাত্যায়নী ধূমাবতী তুমি মা গৌরী,
তুমি দানব দলনী তুমি মা শুভঙ্করী।
কাশের বনে কাঁপন লাগে তুমি মা গৌরী-শৈলপুত্রী,
কাঁপিয়ে তুমি বনবিথী তুমি সিদ্ধীদাতরী।
পূজর গন্ধে মাতিয়ে ভূবন তুমি মা ব্রহ্মচারীণী,
দিকদিগন্তে পূজোর গন্ধে জয় শঙ্খ ধ্বনি
আস মা আস করজোড়ে গাই তোমার আগমনী।
কুহকিনী
যতই বলো তুমি শঙ্খিনী পদ্মিনী--
তুমি যে আমার মিথ্যে আলোর কুহকিনী।
কখনো ছবি আঁকার ছলে হাতে তুলি,
এঁকেছ ভালো মোর উদাস এলো চুলগুলি।
হাতে ফুলের তোড়া, মুখে চোরা হাসি,
তোমার পুরনো গন্ধ চেনা পচা-বাসি।
কারণ জানি, তুমি আমার মিথ্যে আশার কুহকিনী,
আমি তোমায় চিনি ওগো চিনি--
তোমার বাঁশির ছন্দে বশের সুর ঝংকার,
শুনতে মধুর ছিল সেতারের অলংকার।
সকাল-সন্ধ্যে বাতাসে ফুলের গন্ধে--
ময়ূর পেখম তুলে নাচে ছন্দে ছন্দে।
তখন তুমি আসো সোহাগে, হাতে তোমার বিনুনি,
জানি সবই আমার মিথ্যে আশার কুহকিনী।
তুমি শিশির ভেজা রঙিন নেশায় কেতকী কেয়া,
শীতের শিশিরে সেই পুরনো সুর রিনিঝিনি।
আমি চিনি তোমার চির পুরাতন পদধ্বনি,
তুমি তো আমার মিথ্যে আশার কুহকিনী।
শমিত কর্মকারের কবিতা--
বর্তমান ও জলছবি
কোন কিছুই আজ আর সহ্য হচ্ছে না যেন --
কি করবো আর কেনই বা করবো।
একটি মিথ্যাকে সত্য করছে বর্তমান।
সঠিক প্রমাণ দিতে না পারা অপারগ মানুষ আজ দিশাহীন।
তবুও বলতে হবে ওরা যা করছে সঠিক।
শিক্ষার মাঝে অশিক্ষিত মানুষের বাস।
জেগে ঘুমানো মানুষ গুলো করছে মুসকিল!
তবু আশা করবো আমরা লড়বো আমরা মনোভাব।
সত্য কথাকে সত্য বলাটা আমাদের এক লজ্জা।
তবুও আমরাই মানুষ করছি বর্তমানে বাস।
সবাই মানুষের আড়ালে শিরদাঁড়ার হয়েছে তফাৎ।
ছবি আঁকছি দুবেলা জল রঙ দিয়ে শান্ত এক পরিবেশে।
তবুও আমরাই মানুষ এ কেমন স্বভাব।
মৃত্যু হচ্ছে দুবেলা, অভূক্ত মানুষের রাস্তায় বাস।
ঠান্ডা ঘরে আমিও মানুষ সত্য মেবো জয়তে।
শান্তির পক্ষে এই কবিতা--
এ কেমন মরন খেলা
তোমরা মারমুখী হয়ে উঠেছো,
শুধু বিশৃঙ্খলা আর রক্তপাত।
তোমাদের কাছে জীবনের কি কোন মূল্য নেই!
এক্টু শান্ত হয়ে ভাবো, কি করছো তোমারা।
তোমাদের রোশে মরছে নিরিহ মানুষ জন।
তোমাদের জন্য বাসগৃহ ত্যাগ করছে শত শত মানুষ।
শুধু মাত্র কিছু পাবে এই তোমাদের অহংকার।
শত শত মানুষের রক্ত ঝড়িয়ে পারবে?
আবারও বলি শান্ত হও, এক্টু ভাবো।
তোমরাই পারবে শান্তির পথ খুঁজে দিতে।
আজ একটু ছোটদের জন্য--
দিদিমুনি
দিদিমুনি দিদিমুনি ক্লাসে তুমি যাও--
ক্লাসে গিয়ে তুমি নাকি গল্পকথা কও।
দিদিমুনি দিদিমুনি ক্লাসে তুমি যাও--
ক্লাসে গিয়ে তুমি না কি ভীষন রেগে যাও।
দিদিমুনি দিদিমুনি ক্লাসে তুমি যাও--
ক্লাসে গিয়ে তুমি না কি শুধু প্রশ্ন করে যাও।
দিদিমুনি দিদিমুনি ক্লাসে তুমি যাও--
ক্লাসে গিয়ে তুমি না কি শুধু কানমলা দাও।
দিদিমুনি দিদিমুনি ক্লাসে তুমি যাও--
ক্লাস শেষে কেন তুমি বাড়ি চলে যাও?
তাপসকিরণ রায়ের একগুচ্ছ কবিতা—
আঙুর থোকা
আঙুর থোকায় আলতো টোকা মারি--
বেলুন ঘর্ষণ সুখে লাল চাঁদ উড়ে যায়...
তোমার আলুথালু চুলের গন্ধ শুঁকি,
একটা আদলে এসে তুমি থেমে আছো
দক্ষিণা বাতাস কি এখনই বওয়ার ছিল ?
আর ওই লালরঙা শাড়ির ভাঁজ খুলে খুলে
এক দর্শনার্থীর মজে যাবার কথা ছিল না।
তোমার বাধাই আমায় আরও দুর্বৃত্ত বানিয়েছে--
কখনও তুমিও তো চাও ঘরে সিঁধ পড়ুক ?
সমস্ত কিছু তছনছ হয়ে খান খান ছড়িয়ে ছিটিয়ে...
সমস্ত লুণ্ঠন করে চেঙ্গিস খাঁ চলে গেছে,
তার তরবারির ফলা এখনও ঝলসে ওঠে--
অনেক ধর্ষকামী জন্ম নিয়েছে দেশটায়।
কখনও শরীর যেন আমি নই, হয়ে যায়--
কখনও মন শরীরের বশে থাকে না।
তাই বুঝি চেঙ্গিস খাঁ কারও কারও শরীর ভেঙে
এখনো উঠে আসতে পারে!
সে ছায়াবৃত্তের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছোঁ মারতে পারে
কামনার মাংসপিণ্ড।
শ্বেত কবুতর
একটা শ্বেত পতাকা উড়িয়ে ছিলাম।
দুটি শ্বেত কবুতর সে পতাকা থেকে
নিজেদের রঙ মিলিয়ে নিচ্ছিলো।
তোমার শ্বেত পোশাকের নিচে থেকে
উঠে আসছে দুর্দান্ত সব রঙ !
তুমি ধরে রাখতে পারছিলে না --
দেহের রঙ তোমার মনে মিশে যাচ্ছিল।
এক অস্থির অন্তর্দাহ নিয়ে
তোমার শান্তির কামনা তুমি
কিছুতেই রাখতে পারছিলে না।
কালো কেষ্ট
নাড়ি নক্ষত্র টেনে এনে তোমার ঔরস ভাঙে
প্রসব বেদনার পরেই বুঝি এক মা জন্ম নেয়।
অথচ খেলাটা থাকে গোপনে--
নিশুত রাতে কালো কেষ্টর বাঁশি বেজে ওঠে
অন্য রাইকিশোরী ঘর ছেড়ে যায়
ওই মুখ পোড়ার বাঁশির টানে নারী যে বিবসনা হল।
নিশুতি রাতে লজ্জা বিসর্জিত হয়--
উর্বরার দেহে বীজ ঢেলে কর্ষণ করে যায় কালাকেষ্ট।
সে প্রসব যন্ত্রণায় সন্তান হয়ে বেরিয়ে আসে, আর এক ফাটাকেষ্ট।
অন্যদিকে নারীর খোলস পাল্টে নিয়ে এক মা জন্ম নেয়।
এলানো চুল
সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে তবু তোমার মাথার এক ঢাল কালো চুল এলিয়ে পড়েছে
তাতে সুগন্ধি লক্ষীবিলাস মেখেছো তুমি,
নরম বালিশ চেপে তোমার প্যাটারা খুঁজতে খুঁজতে
একগুচ্ছ ব্রায়ের গন্ধ
সবুজের অভাব নেই--তোমার চুলের সোহাগে
না হলেও তুমি, তুমি তো নারী
গন্ধ পাই, সিঁথানের কাঠি নিয়ে যদি জেগে ওঠো তুমি
ব্যর্থতায় পড়ে থাকতে পারি না আমি।
আঙুলের ফাঁক জিরজির কেঁপে উঠতেই পারে
এখনও একটি ড্যামীর মাপ নিয়ে আছড়ে পড়ি তোমার এলানো চুলে !
পানপিক
সে তার বসন্তের পলাশ তুলে নেয়--
খোঁপায় গুঁজে নেয় কৃষ্ণচূড়া,
পানপিকের লাল ঠোঁট তুলে ধরে--
ভালবাসা কোথায় কোথায় যে গজিয়ে উঠছে !
রেলপথ
রেল পথের পাশেই তোমার বাড়ি
ট্রেনের জানলা দিয়ে উঁকি দেয় যাত্রীমুখ
তুমি চেনো না তাদের, তবু যেন একটা মানুষ
তোমায় খুঁজে ফিরছি
যে প্রান্তেই তুমি থাকো না কেন জেনো আছে কেউ, কেউ তো আছে
যে ভবিতব্য থেকে তুলে আনছে বর্তমান
অচিন চিন হয়ে যাচ্ছে, ভালোবাসার মাঝে কোন দেশান্তর নেই।